মুসলিম মেয়েকে ভালোবাসার অপরাধে মৃত্যু হিন্দু যুবকের
- By Jamini Roy --
- 17 November, 2024
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নওয়াবাদ ইউনিয়নের ভুঁইয়া বাজারে হৃদয় রবি দাস নামের এক হিন্দু যুবককে অত্যন্ত নৃশংসভাবে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে, যাকে পরে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। হৃদয়ের আত্মীয় স্বজনরা অভিযোগ করেছেন যে, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কয়েকজন স্থানীয় হুজুর, মেম্বার, চেয়ারম্যান এবং কিছু লোক একত্রিত হয়ে হৃদয়কে তার সেলুন থেকে বের করে একটি রুমে নিয়ে যায় এবং সেখানে অমানবিকভাবে মারধর শুরু করে। তার পরে হৃদয়কে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরদিন সকালে হৃদয়ের পরিবারকে সেনাবাহিনী জানায় যে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারের দাবি, সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পর রাতে তাদের হৃদয়কে দেখার অনুমতি দেয়া হয়নি। এরপর সকালে সেনাবাহিনী তাদের ফোন করে জানানো হয় যে, হৃদয় মারা গেছে। পরিবার দাবি করছে যে, সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় ধর্মীয় নেতা (হুজুর) যৌথভাবে তাদের ছেলে হৃদয় রবি দাসকে হত্যা করেছে। তাদের অভিযোগ, মুসলিম মেয়ে সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক থাকার কারণে হৃদয়কে হত্যা করা হয়েছে ।
হৃদয় রবি দাসের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয় জনগণ বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। হৃদয়ে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা অভিযোগ করেছে যে, মুসলিম ধর্মাবলম্বী এক তরুণীকে ভালোবাসার কারণে হৃদয়কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।পরিবারের সদস্যরা বলছেন, "মুসলিম কোনো ছেলে হলে এমনভাবে মৃত্যু হতো না",যখন কোনো মুসলিম ছেলে হিন্দু মেয়ের সাথে সম্পর্ক ও বিয়ে করে তখন তো সেই ছেলের সাথে এমন হয় না।
হৃদয়ের পরিবারের অভিযোগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার মৃত্যুর পেছনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, "এটি কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ের স্বাধীনভাবে ভালোবাসার অধিকারী সবার আছে, মুসলিম অথবা হিন্দু, কারও ধর্মের কারণে তাকে অত্যাচার করা উচিত নয়।" পরিবারের দাবি, যে বিষয়টি নিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ফলস্বরূপ।
প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সেনাবাহিনী হৃদয়কে হাসপাতালে নিয়ে আসে, তখন তার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হলেও, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হৃদয়কে হাসপাতালে আনার পর তার শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এই ঘটনার পর, স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। তাদের দাবি, স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা উচিত, যাতে কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় অন্যের ধর্মীয় বা সামাজিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে আক্রান্ত না হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি, হিন্দু যুবক হৃদয় রবি দাসের ওপর যে নির্মম হামলা এবং হত্যা করা হয়েছে, তা শুধু তার ব্যক্তিগত জীবন নয়, বরং পুরো দেশের মানুষের জন্য একটি বিপজ্জনক সংকেত।
পুলিশ ও প্রশাসন ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর আরো বিস্তারিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে নিহত হৃদয়ের পরিবার এবং স্থানীয় জনগণ দাবি করছে, ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক অশান্তি বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষত, তারা দাবি করছে যে, তার মৃত্যু সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের একটি উদাহরণ, যা সমাজে অস্থিরতা এবং জাতিগত বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।